পলাশীর দূর্গতি ও আমাদের রাজনীতি
আজ ২৩ জুন পলাশী দিবস। পলাশী বিপর্যয়ের ২৫৪ বছর পূর্ণ হলো। পলশী একটি যুদ্ধ
ক্ষেত্রের নাম নয়, একটি ঘটনা বা দুর্ঘটনা নয়, ইতিহাসে বাকঁ ঘুরানো একটি
দিন। একটি কলঙ্কময় মহা ট্র্যাজেডি। পলাশী ছিল একটি তমসার রাজনীতি।
উপমহাদেশের ইতিহাসে তো বটেই, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রভাব বিস্তারকারী একটি
ঘটনা। পলাশী শুধু প্রভাব রাখেনি, আমাদের শিা ও ভিন্নমাত্রিক অনুশোচনার উৎস
হয়ে আছে। অনেব ইতিহাস আছে মানব সম্প্র্রদায়কে প্রত্যাহিক ভাবায়। অতীত
ইতিহাসের দিকে তাকাতে বাধ্য করে। সেই ইতিহাস বিচার-বিশ্লেষন করা হয়ে উঠে
অনিবার্য। পেছনের ইতিহাস মানবগোষ্ঠীকে সামনের দিকে চলতে গতিশীল করে। শিা
দেয় চলার পথে ভিন্নমাত্রিক ক্যালসিয়াম।
একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে, কোন জাতি প্রকৃত অতিত ইতিহাস ব্যতিরেকে যেমন গড়ে তুলতে পারেনা সম্মানজনক বর্তমান। তেমনি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনা গৌরবউজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। অগ্রগতির জন্য যে কোন জাতির অন্যতম সম্বল হচ্ছে তার ইতিহাস। ইতিহাস মানবমন্ডলীকে উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে শিখায়। ইতিহাস বলা চলে জাতির দর্পণ। সেই দর্পণে জাতিকে দেখতে হবে অর্জন আর ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি,তার গুন আর ত্রুটির,তার বিচণতা আর ভ্রন্তির প্রতিফলন। ইতিহাস জাতির শিাদাতা, প্রেরণা দাতা ,পথ নির্দেষক আর আত্মবিস্বাস উৎপাদণকারী। যে জাতির ইতিহাস নেই, নিজ ইতিহাসের জ্ঞান নেই যে জাতির,সে জাতি মেরুদন্ডহীন। নিজের পায়ে দাড়াঁতে পারেনা সে জাতি; হেটে চলা তো দূরে থাক।
পলাশী সেই দিন যে দিনটি স্বধীনতার শত্রু মিত্র যাচাইয়ের উৎসাহ যোগায়। ষড়যন্ত্র কত কিসিম বুঝতে সাহায্য করে। মুনাফিক্বি আর বিশ্বাসঘাতকতার চরম মিছাল বুঝতে সাহায্য করে।তবুও পলাশীকে স্বরণ করি। মর্মতলে তপ্তব্যথা লুক্কায়িত, এর মাঝেও শোককে শক্তিতে রপান্তরিত করার প্রেরণা পাই। সেই শক্তিকে সাথে নিয়ে বলি, আর কোন পলাশী নয়, আর কোন মীরজাফরী নয়, নয় আর কোন ষড়যন্ত্র। পলাশী আমাদের স্বাধীনতা রার তাগিদ বহু গুন বাড়িয়ে দেয়। আমাদের অস্থিত্য টিকে রাখতে সর্বাত্মক শিা দেয়। বলা যায় পলাশী আগামী দিনের জন্য পথপদর্শক।এ কারনেই পলাশী শুধু একফালী জমি নয়, যুদ্ধত্রে নয়; পলাশী স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষের রক্তরনের স্থান। সেই সথে বিস্বাসঘাতকদের শাঠ্য বুঝবার ত্রেও। পলাশী মানে মানুষের হৃদয়ে নিরন্তর বাসনা। সর্বদা বিস্বাসঘাতকতার মোকবেলায় স্বাধীনতা রার প্রতিশ্রুতি।সব মিলিয়ে পলাশী আমাদের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। মুসলমানদের জন্য একটি চরম শিা।
পলাশী বিপর্যয় শুধু বাঙলার স্বধীনতা হরণের দিন নয়, মুসলমান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র নয়। পুরো উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল এদিন থেকে। বণিকের মানদন্ডকে রাজদন্ডে রুপান্তর করে রাষ্ট্রশক্তি ণভঙ্গুর করার সরাসরি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল পলাশী ষড়যন্ত্র থেকে। বেনিয়াদের কুঠিবাড়ি এবং তাদের দেশীয় এজেন্টদের দহলিজ ছিল সেই ষড়যন্ত্রের আখড়া।
তাই ইতিহাসে মহানায়ক নবাব সিরাজউদ্দৌলা আর স্বাধীনতা যেন সামর্থবোধক হয়ে ধরা দেয়। মীরজাফর, রায় দূর্লভ, ইয়ার লতিফ , উর্মিচাঁদ ,ঘসেটি বেগম ও জগৎশেঠরা বিশ্বাসঘাতকের প্রতিক হিসেবে আমাদের মানসপটে ভেসে উঠে।এগুলো শুধু কোন ইস্ম নয় ,তার আড়ালে ইতিহস চিহ্নিত কুখ্যাতির খেতাবপ্রাপ্ত,অভিযুক্ত ও অভিশপ্ত প্রতীকী চেহারা। এ কারনেই প্রত্যেক ঘটনার মূহুর্তে পত্য করি সত্য ও স্বাধীনতার প্রতিক সিরাজকে । আর প্রতিপে স্বরণ করি বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর ও তার দোসরদের । মীরজাফর মতার মোহে পড়ে একসময় ষড়যন্ত্র জড়িয়ে যায় ।
ইস্ট ইন্ডিয়া ও তার অনুচররা কালক্রমে রাষ্ট্রশক্তিকে দূর্বল করে দেয়। তারা অত্যান্ত কৌশলে চুক্তির নামে দেশের অর্থনীতি ব্যবসা বাণিজ্য দখল করতে শুরু করে। কালস্রোতে শাসকদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে নানা ধরনের অসম সন্ধি ও চুক্তির মাধ্যমে অক্টোপাসের মতো চেঁপে ধরে কাবু করে ফেলে স্বাধীন ও সার্বভৌম সত্তাকে। তারপর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে তাদের অপতৎপরতা । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বিস্বাসঘাতকদের বিদ্রোহী করে তোলে। নবাবকে জনগণের কাছে অযোগ্য অথর্ব এবং নারীলোলুপ একজন দুর্বৃত্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে নানা ধরনের মিথ্যা প্রচারণা চালায়। পাশের লোকদের মাঝে মসনদের মোহ জাগিয়ে তোলে। নামমাত্র নবাব হিসেবে ইংরেজদের হাত ধরে মীরজাফর মতায় অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু শর্তের জালে আটকা পড়ে যায় মীরজাফরসহ পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী।একে একে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এবং মিস্টার কাইভের ষড়যন্ত্রে শাসন মতা চলে যায় ব্রিটিশ এর হাতে। অতঃপর যা হবার তাতো হলোই।
ক্রেমিনালরা কিভাবে অন্যের হয়ে কাজ করে বুঝাও যায় না। কিন্তু ষড়যনত্রকরীরা যতই চতুর হোক না কেন, একদিন তাকে ধরা খেতেই হবে। কথায় আছে “চুরের দশ দিন গেরস্তের একদিন” চুর যতই চুরি করুক না কেন একদিন তাকে ধরা খেতে হবে। আমাদের সমাজে এরুপ ভুরি-ভুরি নজির আছে। ঠিক তেমনি ষড়যন্ত্রকারীদেরও একি হাল আবস্থা। যেমনটি ঘটেছিল পলাশীর মহা ট্র্যাজেডিতে। পলাশীর হোতাদের পরিণতি শেষ পর্যন্ত ভালো হয়নি। ষড়যন্ত্র আর বিস্বাসঘাতকতার পরিণাম কখনো ভলোও হয়না। আখেরাতে শাস্তি পাওয়ার আগে দুনিয়াতেও তারা লাঞ্ছিত, অপমানিত ও আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। পলাশীর যুদ্ধে এটিই সত্য প্রমাণিত হয়েছিল।
যাক মূল বিষয়ে ফিরে যাই। পলাশীর প্রধান ক’জন নায়ক উপনায়কদের কি দশা হল ; কি হয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি তা এখানে সংেেপ বলছি। নবাবের সেনাপতি নাম্বার ওয়ান বিস্বাসঘাতক মীরজাফর কুষ্ঠব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সকলের কাছে ঘৃণ্য অস্পৃশ্য হয়ে রইলেন। তার কুপুত্র মিরণ, যিনি নবাবির লোভে সিরাজউদ্দৌলার বংশের একটি ছেলেকেও জ্যান্ত রাখেননি, সবাইকে এক এক করে খুন করেছিলেন, তিনি বজ্রঘাতে প্রাণ দিলেন। দুর্লভরাম, মীরজাফর আর মিরণের হাতে পড়ে নান্তানাবুদ হয়ে সর্বস্বান্ত হলেন। অবশেষে ইংরেজদের সাহায্যে কোনরকমে প্রাণে বেঁচে গিয়ে কলকাতায় পালিয়ে এলেন। নন্দকুমারকে শেষ পযন্ত ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছিল। নবাব মীরকাশেম কর্তৃক মুঙ্গের দূর্গের উপর থেকে গঙ্গা নদীতে জিবন্ত নিপ্তি হয়েছিল বিস্বাসঘাতক শিরোমণি জগৎশেঠ ও রাজা রায় দূর্লভ।
ওয়াট্স্ কোম্পানীর কাজ থেকে বরখাস্ত হয়ে ইয়ার লতিফ বিলেত পালিয়ে মনের দুঃখে সেখানে মারা গেলেন। স্ক্রাফটন জাহাজডুবি হয়ে মরলেন। পলাশী চক্রান্তের মহা নায়ক নাম্বার ওয়ান চক্রান্তকারী, স্বয়ং রবার্ট কাইভ ব্যরণ অবপ্যস্ট হয়েও, কি দুঃখে জানিনা, নিজের হাতে ুর চালিয়ে আত্মহত্যা করলেন। (তথ্য সূত্র: ভুলে যাওয়া ইতিহাস)
এসব ঘটনার সাথে আজকের মিল, অমিল ভেবে দেখার বিষয়। এবং ঐতিহাসিক পলাশীর দর্পণে আজকের ছিয়াছত তথা রাজনীতির হালচাল সংক্ষেপে তফসীর করা নেহাত জরুরী। একথা ধ্রুবসত্য যে পৃথিবীর আদি যুগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত, হক আর বাতিল থাকবে। তাকে খন্ডন করার কোন ফুরসত বা জো নেই। বর্তমানেও আছে, এবং সেটা ওয়ারাসতী সূত্রে থেকে ধারাবাহিক চলতে থাকবে। একইভাবে মীর জাফর আর বিস্বাসঘাতকদেরও উত্তরাধিকারী সূত্র রয়েছে। অতীত যামানায় যেভাবে মীরজাফর ও তার সহচররা ছিল এবং বিস্বাসঘাতকতা করেছিল বর্তমানেও তাদের উত্তরসূরী বিদ্যমান।
ব্যক্তিগতভাবে হোক, দলীয়ভাবে হোক, দেশের বিরোধী দল বলুন আর মতাসীন দল বলুন সবেরই পেছনে একদল মীরজাফর ও বিস্বাসঘাতক রয়েছে। এটাকে ফেলানোর মত কোন রাস্তা অন্তত আমি খুজে পাচ্ছিনা। জানিনা আপনাদের বিবেক কি বলবে। আগেই বলেছি ষড়যন্ত্র ও বিস্বাসঘাতকতার পরিমাণ শেষ পর্যন্ত কখনো শুভ হয় না। পদে পদে লাঞ্ছিত, অপমানিত, অভিশপ্ত। অতএব বিস্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারীরা সাবধান ! আরেক দলের কথা বলব? হ্যাঁ মিস্টার রবার্ট কাইভের দল, যে ছিল পলাশী ষড়যন্ত্রের অগ্রনায়ক। ষড়যন্ত্র কাহাকে বলে এবং উহা কত প্রকার তা রবার্ট কাইভের দিকে নজর দিলে সহজেই অনুমেয় হয়। অনায়াসে পাওয়া যায় প্রশ্ন গুলোর জওয়াব। চুক্তির নামে দুরভিসন্ধি এছিল কাইভের পেশা। নকল চুক্তি জাল দস্তখত এ সবই ছিল কাইভের আমল। এ সারির লোকও আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে খুজলে পাওয় যাবে ইনশাআল্লাহ।
পলাশী আমাদের অবিজ্ঞতার নিয়ামক। তাই আমরা সহজেই বুঝতে পারি কারা শত্রু আর কারা মিত্র। যখনই দেখি এদেশে বহুজাতিক কোম্পানীর ষড়যন্ত্রের মায়াবী চাল,এনজিও তৎপরতাগুলোর দূরভিসন্ধি, তখনই আমরা টের পেয়ে যাই। পরাশক্তির নড়াচড়া দেখলেই ভাবতে চেষ্টা করি, বোধ করি আরেকটি পলাশী ধেয়ে আসছে নাকি। পলাশী আমাদের জাগ্রত রাখে, সম্বিত ফিরিয়ে দেয়। দেশের সরকার যদি জনগণকে না জানিয়ে বিদেশী কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হন, তখন ভাবি চুক্তি কি আসলেই কোন ফলদায়ক চুক্তি, নাকি চুক্তির নামে দেশ ধ্বংষ করার অশুভ নীলনকশা। পলাশী আমাদের সুযোগ দিয়েছিল বলেই আজ আমাদের টনক নঢ়ে। সুতরাং পলাশী ট্র্যাজেডী ইতিহাসে চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে।
একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে, কোন জাতি প্রকৃত অতিত ইতিহাস ব্যতিরেকে যেমন গড়ে তুলতে পারেনা সম্মানজনক বর্তমান। তেমনি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনা গৌরবউজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। অগ্রগতির জন্য যে কোন জাতির অন্যতম সম্বল হচ্ছে তার ইতিহাস। ইতিহাস মানবমন্ডলীকে উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে শিখায়। ইতিহাস বলা চলে জাতির দর্পণ। সেই দর্পণে জাতিকে দেখতে হবে অর্জন আর ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি,তার গুন আর ত্রুটির,তার বিচণতা আর ভ্রন্তির প্রতিফলন। ইতিহাস জাতির শিাদাতা, প্রেরণা দাতা ,পথ নির্দেষক আর আত্মবিস্বাস উৎপাদণকারী। যে জাতির ইতিহাস নেই, নিজ ইতিহাসের জ্ঞান নেই যে জাতির,সে জাতি মেরুদন্ডহীন। নিজের পায়ে দাড়াঁতে পারেনা সে জাতি; হেটে চলা তো দূরে থাক।
পলাশী সেই দিন যে দিনটি স্বধীনতার শত্রু মিত্র যাচাইয়ের উৎসাহ যোগায়। ষড়যন্ত্র কত কিসিম বুঝতে সাহায্য করে। মুনাফিক্বি আর বিশ্বাসঘাতকতার চরম মিছাল বুঝতে সাহায্য করে।তবুও পলাশীকে স্বরণ করি। মর্মতলে তপ্তব্যথা লুক্কায়িত, এর মাঝেও শোককে শক্তিতে রপান্তরিত করার প্রেরণা পাই। সেই শক্তিকে সাথে নিয়ে বলি, আর কোন পলাশী নয়, আর কোন মীরজাফরী নয়, নয় আর কোন ষড়যন্ত্র। পলাশী আমাদের স্বাধীনতা রার তাগিদ বহু গুন বাড়িয়ে দেয়। আমাদের অস্থিত্য টিকে রাখতে সর্বাত্মক শিা দেয়। বলা যায় পলাশী আগামী দিনের জন্য পথপদর্শক।এ কারনেই পলাশী শুধু একফালী জমি নয়, যুদ্ধত্রে নয়; পলাশী স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষের রক্তরনের স্থান। সেই সথে বিস্বাসঘাতকদের শাঠ্য বুঝবার ত্রেও। পলাশী মানে মানুষের হৃদয়ে নিরন্তর বাসনা। সর্বদা বিস্বাসঘাতকতার মোকবেলায় স্বাধীনতা রার প্রতিশ্রুতি।সব মিলিয়ে পলাশী আমাদের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। মুসলমানদের জন্য একটি চরম শিা।
পলাশী বিপর্যয় শুধু বাঙলার স্বধীনতা হরণের দিন নয়, মুসলমান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র নয়। পুরো উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল এদিন থেকে। বণিকের মানদন্ডকে রাজদন্ডে রুপান্তর করে রাষ্ট্রশক্তি ণভঙ্গুর করার সরাসরি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল পলাশী ষড়যন্ত্র থেকে। বেনিয়াদের কুঠিবাড়ি এবং তাদের দেশীয় এজেন্টদের দহলিজ ছিল সেই ষড়যন্ত্রের আখড়া।
তাই ইতিহাসে মহানায়ক নবাব সিরাজউদ্দৌলা আর স্বাধীনতা যেন সামর্থবোধক হয়ে ধরা দেয়। মীরজাফর, রায় দূর্লভ, ইয়ার লতিফ , উর্মিচাঁদ ,ঘসেটি বেগম ও জগৎশেঠরা বিশ্বাসঘাতকের প্রতিক হিসেবে আমাদের মানসপটে ভেসে উঠে।এগুলো শুধু কোন ইস্ম নয় ,তার আড়ালে ইতিহস চিহ্নিত কুখ্যাতির খেতাবপ্রাপ্ত,অভিযুক্ত ও অভিশপ্ত প্রতীকী চেহারা। এ কারনেই প্রত্যেক ঘটনার মূহুর্তে পত্য করি সত্য ও স্বাধীনতার প্রতিক সিরাজকে । আর প্রতিপে স্বরণ করি বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর ও তার দোসরদের । মীরজাফর মতার মোহে পড়ে একসময় ষড়যন্ত্র জড়িয়ে যায় ।
ইস্ট ইন্ডিয়া ও তার অনুচররা কালক্রমে রাষ্ট্রশক্তিকে দূর্বল করে দেয়। তারা অত্যান্ত কৌশলে চুক্তির নামে দেশের অর্থনীতি ব্যবসা বাণিজ্য দখল করতে শুরু করে। কালস্রোতে শাসকদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে নানা ধরনের অসম সন্ধি ও চুক্তির মাধ্যমে অক্টোপাসের মতো চেঁপে ধরে কাবু করে ফেলে স্বাধীন ও সার্বভৌম সত্তাকে। তারপর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে তাদের অপতৎপরতা । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বিস্বাসঘাতকদের বিদ্রোহী করে তোলে। নবাবকে জনগণের কাছে অযোগ্য অথর্ব এবং নারীলোলুপ একজন দুর্বৃত্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে নানা ধরনের মিথ্যা প্রচারণা চালায়। পাশের লোকদের মাঝে মসনদের মোহ জাগিয়ে তোলে। নামমাত্র নবাব হিসেবে ইংরেজদের হাত ধরে মীরজাফর মতায় অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু শর্তের জালে আটকা পড়ে যায় মীরজাফরসহ পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী।একে একে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এবং মিস্টার কাইভের ষড়যন্ত্রে শাসন মতা চলে যায় ব্রিটিশ এর হাতে। অতঃপর যা হবার তাতো হলোই।
ক্রেমিনালরা কিভাবে অন্যের হয়ে কাজ করে বুঝাও যায় না। কিন্তু ষড়যনত্রকরীরা যতই চতুর হোক না কেন, একদিন তাকে ধরা খেতেই হবে। কথায় আছে “চুরের দশ দিন গেরস্তের একদিন” চুর যতই চুরি করুক না কেন একদিন তাকে ধরা খেতে হবে। আমাদের সমাজে এরুপ ভুরি-ভুরি নজির আছে। ঠিক তেমনি ষড়যন্ত্রকারীদেরও একি হাল আবস্থা। যেমনটি ঘটেছিল পলাশীর মহা ট্র্যাজেডিতে। পলাশীর হোতাদের পরিণতি শেষ পর্যন্ত ভালো হয়নি। ষড়যন্ত্র আর বিস্বাসঘাতকতার পরিণাম কখনো ভলোও হয়না। আখেরাতে শাস্তি পাওয়ার আগে দুনিয়াতেও তারা লাঞ্ছিত, অপমানিত ও আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। পলাশীর যুদ্ধে এটিই সত্য প্রমাণিত হয়েছিল।
যাক মূল বিষয়ে ফিরে যাই। পলাশীর প্রধান ক’জন নায়ক উপনায়কদের কি দশা হল ; কি হয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি তা এখানে সংেেপ বলছি। নবাবের সেনাপতি নাম্বার ওয়ান বিস্বাসঘাতক মীরজাফর কুষ্ঠব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সকলের কাছে ঘৃণ্য অস্পৃশ্য হয়ে রইলেন। তার কুপুত্র মিরণ, যিনি নবাবির লোভে সিরাজউদ্দৌলার বংশের একটি ছেলেকেও জ্যান্ত রাখেননি, সবাইকে এক এক করে খুন করেছিলেন, তিনি বজ্রঘাতে প্রাণ দিলেন। দুর্লভরাম, মীরজাফর আর মিরণের হাতে পড়ে নান্তানাবুদ হয়ে সর্বস্বান্ত হলেন। অবশেষে ইংরেজদের সাহায্যে কোনরকমে প্রাণে বেঁচে গিয়ে কলকাতায় পালিয়ে এলেন। নন্দকুমারকে শেষ পযন্ত ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছিল। নবাব মীরকাশেম কর্তৃক মুঙ্গের দূর্গের উপর থেকে গঙ্গা নদীতে জিবন্ত নিপ্তি হয়েছিল বিস্বাসঘাতক শিরোমণি জগৎশেঠ ও রাজা রায় দূর্লভ।
ওয়াট্স্ কোম্পানীর কাজ থেকে বরখাস্ত হয়ে ইয়ার লতিফ বিলেত পালিয়ে মনের দুঃখে সেখানে মারা গেলেন। স্ক্রাফটন জাহাজডুবি হয়ে মরলেন। পলাশী চক্রান্তের মহা নায়ক নাম্বার ওয়ান চক্রান্তকারী, স্বয়ং রবার্ট কাইভ ব্যরণ অবপ্যস্ট হয়েও, কি দুঃখে জানিনা, নিজের হাতে ুর চালিয়ে আত্মহত্যা করলেন। (তথ্য সূত্র: ভুলে যাওয়া ইতিহাস)
এসব ঘটনার সাথে আজকের মিল, অমিল ভেবে দেখার বিষয়। এবং ঐতিহাসিক পলাশীর দর্পণে আজকের ছিয়াছত তথা রাজনীতির হালচাল সংক্ষেপে তফসীর করা নেহাত জরুরী। একথা ধ্রুবসত্য যে পৃথিবীর আদি যুগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত, হক আর বাতিল থাকবে। তাকে খন্ডন করার কোন ফুরসত বা জো নেই। বর্তমানেও আছে, এবং সেটা ওয়ারাসতী সূত্রে থেকে ধারাবাহিক চলতে থাকবে। একইভাবে মীর জাফর আর বিস্বাসঘাতকদেরও উত্তরাধিকারী সূত্র রয়েছে। অতীত যামানায় যেভাবে মীরজাফর ও তার সহচররা ছিল এবং বিস্বাসঘাতকতা করেছিল বর্তমানেও তাদের উত্তরসূরী বিদ্যমান।
ব্যক্তিগতভাবে হোক, দলীয়ভাবে হোক, দেশের বিরোধী দল বলুন আর মতাসীন দল বলুন সবেরই পেছনে একদল মীরজাফর ও বিস্বাসঘাতক রয়েছে। এটাকে ফেলানোর মত কোন রাস্তা অন্তত আমি খুজে পাচ্ছিনা। জানিনা আপনাদের বিবেক কি বলবে। আগেই বলেছি ষড়যন্ত্র ও বিস্বাসঘাতকতার পরিমাণ শেষ পর্যন্ত কখনো শুভ হয় না। পদে পদে লাঞ্ছিত, অপমানিত, অভিশপ্ত। অতএব বিস্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারীরা সাবধান ! আরেক দলের কথা বলব? হ্যাঁ মিস্টার রবার্ট কাইভের দল, যে ছিল পলাশী ষড়যন্ত্রের অগ্রনায়ক। ষড়যন্ত্র কাহাকে বলে এবং উহা কত প্রকার তা রবার্ট কাইভের দিকে নজর দিলে সহজেই অনুমেয় হয়। অনায়াসে পাওয়া যায় প্রশ্ন গুলোর জওয়াব। চুক্তির নামে দুরভিসন্ধি এছিল কাইভের পেশা। নকল চুক্তি জাল দস্তখত এ সবই ছিল কাইভের আমল। এ সারির লোকও আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে খুজলে পাওয় যাবে ইনশাআল্লাহ।
পলাশী আমাদের অবিজ্ঞতার নিয়ামক। তাই আমরা সহজেই বুঝতে পারি কারা শত্রু আর কারা মিত্র। যখনই দেখি এদেশে বহুজাতিক কোম্পানীর ষড়যন্ত্রের মায়াবী চাল,এনজিও তৎপরতাগুলোর দূরভিসন্ধি, তখনই আমরা টের পেয়ে যাই। পরাশক্তির নড়াচড়া দেখলেই ভাবতে চেষ্টা করি, বোধ করি আরেকটি পলাশী ধেয়ে আসছে নাকি। পলাশী আমাদের জাগ্রত রাখে, সম্বিত ফিরিয়ে দেয়। দেশের সরকার যদি জনগণকে না জানিয়ে বিদেশী কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হন, তখন ভাবি চুক্তি কি আসলেই কোন ফলদায়ক চুক্তি, নাকি চুক্তির নামে দেশ ধ্বংষ করার অশুভ নীলনকশা। পলাশী আমাদের সুযোগ দিয়েছিল বলেই আজ আমাদের টনক নঢ়ে। সুতরাং পলাশী ট্র্যাজেডী ইতিহাসে চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে।
দুর্ভগ্য, আমরা ইতিহাস থেকে শিা নিতে চাই না। পরন্তু আমরা
ইতিহাসকে চেঁপে রাখি। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম শিাকে কি আর এড়ানো যায়?
অবশ্যই না। অতএব আসুন আমর সত্য ইতিহাসকে জানি এবং তার বাস্তব শিার উপর আমল
করি। এ শিা আমলে নিবেন বিশেষত যারা দেশ পরিচালনা করেন তারা। সাথে সাথে
দেমপ্রেমিক স্বধীনতাপ্রেমী জনগণকেও স্বরণ রাখতে হবে ঐতিহাসিক পলাশীর মহা
ট্র্যাজেডি। আল্লাহ আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় করুক।
valO lagolO............................ :)
উত্তরমুছুন